বর্তমান সময়ে ইনসমনিয়া খুব বড় একটা সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ঢাকা শহরের কোলাহলে জেগে থাকা প্রান যখন রাতের নি:শব্দে চোখ বোজে তখন অনেক প্রান জেগে জেগে শব্দ খোজে। চোখ ঘুম নেই। নিদ্রাহীনতার এই সমস্যার ফলে নিত্যদিনের কাজেরও নানান সমস্যার দেখা মেলে।
আলোচনা করবো ঘুম না আসার সমাধান নিয়ে।
১. গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমাতে গেলেই নানান দুশ্চিন্তার কথা মাথায় আসে। ফলে আর ঘুম আসেনা। তবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটা পদ্ধতি আছে, যাকে বলে ‘দুশ্চিন্তার সময়’। অর্থ্যাৎ দুশ্চিন্তার জন্য আলাদা সময় রাখা। ধরেন আপনার দুশ্চিন্তা করার সময় বিকাল চারটা থেকে পাঁচটা। আপনি এই সময়েই আপনার সমস্যা গুলো নিয়ে ভাববেন। তাহলে রাতে ঘুমাতে যাবার সময় অনেকটাই নিস্তার পাওয়া যায়। এরপরেও যদি রাতে নতুন করে চিন্তা মাথায় আসে তাহলে নিজেকে বলুন, এ সমস্যা নিয়ে কাল নির্দিষ্ট সময় আবার ভাবা যাবে।
২. কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চা, কফি, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস। কারন এসবে থাকে ক্যাফিন। আর ক্যাফিন আমাদের ঘুম হতে দেয় না। হলেও খুব গভীর ঘুম হয় না। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের এসব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। বিশেষ করে ঘুমের ছয় ঘন্টা আগে এগুলো খাওয়া উচিত না।
৩. ঘুমের আগ দিয়ে গরম দুধ খেতে পারেন। কারন এতে রয়েছে ট্রিপটোফ্যান। যা লম্বা সময় ঘুমের জন্য সাহায্য করে।
৪. নিদ্রাহীনতা সমস্যার জন্য আরেকটা পদ্ধতির কথা বলা হয়। যা হলো ঘুমাতে যাবার আগে এক ঘন্টা রিলাক্স করা। দিনের ব্যস্ততা এবং দুশ্চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে আনতে এই সময়টা ব্যবহার করতে বলা হয়। এই একঘন্টা যেসব কাজগুলো করতে পারেন-
~ বই পড়া
~ ডায়েরি লেখা
~ গরম পানি দিয়ে গোসল করা
~ মনে প্রশান্তি আনে এমন শ্রুতিমধুর কিছু শোনা। যেমন ধর্মগ্রন্থ, কবিতা আবৃত্তি, গান, অডিও বুক; যা আপনার জন্য কার্যকর হয়।
ঘুমানোর আগে যেসব কাজগুলো করা যাবে না
— টিভি দেখা
— মোবাইলফোন ব্যবহার করা
কারন এসব ডিভাইসের আলো মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
৫. যাদের বিছানায় শুয়ে থাকার পরেও ঘুম না আসার সমস্যা আছে তাদের জন্য একটি চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া হয়। উদ্দেশ্য হলো আপনার মস্তিষ্ক শোবার ঘর বা বিছানা দেখলে ঘুমের কথা চিন্তা করবে। যদি বিছায় শুয়ে দশ মিনিট এপাশ ওপাশ করার পরেও ঘুম না আসে তাহলে জোর করে শুয়ে থাকবেন না। উঠে যেয়ে পাশের রুমে চলে যেতে পারেন। হালকা আলোতে বই পড়তে পারেন, গান শুনতে পারেন। তবে ঘুনাক্ষরেও ফোন কিংবা ল্যাপটপ জাতীয় ডিভাইস চালানো যাবে না।
৬. ঘুমের সমস্যা এড়িয়ে চলার জন্য বিছানায় ঘুম বাদে অন্য কাজগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা অনেকেই বিছানায় খাবার খাই, পড়াশোনা করি, দিনের অর্ধেক কাজ দেখা যায় বিছানাতেই সেরে ফেলি। এই অভ্যেস পরিবির্তন করে শুধুমাত্র ঘুমের জন্যই বিছানা ব্যবহার করতে হবে।
৭. অনেক নিদ্রাহীনতার রোগী বারবার ঘড়িতে সময় দেখে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পরে। এতে ঘুমের উপর বেশ খারাপ একটা প্রভাব পরে৷ তাই ঘড়ি উল্টোদিকে মুখ রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
৮. ঘুমাতে যাওয়াত তিন থেকে চার ঘন্টা আগেই রাতের খাবার সেরে ফেলা উচিত। এতে ঘুমের ব্যাঘাত হয়না।
৯. ধুমপান এড়িয়ে চলতে হবে। কারন নিকোটিন একটি উত্তেজক পদার্থ৷ গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ধুমপান করে তারা ঘুমাতে পারে না, ঘুম থেকে ঘন ঘন জেগে উঠে এবং প্রায়ই তাদের ঘুম ব্যহত হয়।
১০. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। শরীর সচল রাখলে রাতে ঘুম ভালো হয়। তবে ঘুমানোর তিন ঘন্টা আগে থেকেই ব্যায়াম সেরে ফেলা উচিত।
এসবগুলো নির্দেশনা মেনে চললেই অনিদ্রা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া নিয়মিত একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠার অভ্যেস থাকলে ঘুমানোর সময় ভালো কাটে। নগরের সর্বাংশে নাগরিকের চোখে ঘুম নামুক। সকলের সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
0 Comments