বাসে, ঘাটে, ট্রামে, রাস্তার ফুটপাতে ধুমপানের শুরু দেখা গেলেও ঠিক শেষ নাই। সীমারেখার দাড়িপাল্লায় ধুমপানের বিপদজনক মেপে ঠিক বোঝানো যাবেনা। তবে এখন অনেকেই সতর্ক হয়ে ধুমপান ছাড়তে চায়। তবে সমস্যা হচ্ছে ঠিক পেরে উঠতে পারছেনা। আবার দেখা যায় অনেকেই মাঝ পথে মনোবল হারিয়ে ফেলছে। প্রথমেই বলছি ধুমপান করলে আপনার শরীরে কি কি ঘটে। এতে আপনার ইচ্ছাশক্তি বেশ মজবুত হতে পারে। > মানুষ অক্সিজেন ছাড়া বাঁচতে পারেনা। আমাদের নি:শ্বাসের সাথে অক্সিজেন প্রথম ফুসফুসে যায়। সেখান থেকে ঢুকে যায় রক্তে। ফুসফুসে আছে কোটি কোটি বায়ুথলি। এই বায়ুথলি দিয়েই ফুসফুস থেকে অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে। ফুসফুস এই বায়ুথলিগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে। আর একবার বায়ুথলি ধ্বংস হলে তা আবার নতুন করে তৈরি হয় না। কোটি কোটি বায়ুথলি থাকার কারনে কিছু নষ্ট হলে আমরা বুঝতেও পারিনা।
তবে নিরবে ফুসফুসের ক্ষতি হতে থাকে। দিনে দিনে অনেক বায়ুথলি ধ্বংস হলে শুরু হয় শ্বাসকষ্টের রোগ। একবার শ্বাসকষ্টের রোগ হলে তা থেকে পুরোপুরি সেরে উঠার কোনো উপায় নেই। সাথে ধুমপান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় অন্তত পঁচিশ গুন। অনেকেই বলে থাকেন, যতদিন বেঁচে আছি আনন্দে বাঁচবো। এই ধুমপান শুধু মৃত্যুই নিশ্চিত করে না মৃত্যুর আগেও আমাদের শরীরে নানাবিধ বাধ সাধতে সাহায্য করে। এই যেমন- > প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া। অর্থাৎ বাচ্চা হতে সমস্যা হওয়া। বাচ্চা হলে বাচ্চার শরীরে জন্মগত ত্রুটি থাকা। > অল্পবয়সে চামড়ায় ভাজ পরা। > হাড় নরম হয়ে যাওয়া। > দাঁত, মাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া। > চোখে ছানি পরা। > শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। তবে যখন থেকেই আপনি ধুমপান ছাড়বেন তখন থেকেই আপনার শরীর নিজেকে মেরামতের কাজ শুরু করে দিবে। যেমন – — শেষ সিগারেটের বিশ মিনিটের মধ্যে হার্টবিট ও ব্লাডপ্রেশার স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে। আট ঘন্টার মধে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। — আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে শরীর থেকে সকল ক্ষতিকর কার্বন- মনো- অক্সাইড দূর হয়ে যায়। — নাকের ঘ্রান ও মুখের স্বাদ ফিরে আসে। — বায়াত্তর ঘন্টার মধ্যে শ্বাসতন্ত্র প্রসারিত হওয়া শুরু করে। ফলে শ্বাস নেয়া সহজতর হয়। — তিন থেকে নয় মাসের মধ্যে ফুসফুসের ক্ষমতা দশ পার্সেন্ট অব্দি বাড়তে পারে৷ — একবছর পর হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি অর্ধেকে নেমে আসে। — দশ বছর পর ফুসফুসে ক্যান্সারের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে। — পনেরো বছর পর আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি আর একজন অধুমপায়ী হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সমান হয়ে যায়। বোধ করি আপনার ধুমপান ছাড়ার মনোবল শক্ত হয়েছে। এখন জেনে নিচ্ছি ধুমপান ছাড়ার সাতটি পরামর্শ। ১. সিগারেটে আর একটাও টান দেয়া যাবেনা। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকে ধুমপান ছেড়ে দেবার পরেও শুধু একটা টান দিব বলে আবার ধুমপানে ফেরত চলে যায়। তাই শক্ত থাকতে হবে যে সিগারেটে আর একটা টান ও দেয়া যাবেনা। ২. যেসব জিনিস দেখলে আপনার ধুমপান করতে মন চাইবে। যেমন: সিগারেট, লাইটার, অ্যাশট্রে ইত্যাদি এগুলো সরিয়ে ফেলুন। ৩. যেসব জায়গায় আপনি ধুমপান করতেন, পারলে সেখানে যাওয়া- আসা এড়িয়ে চলবেন। ৪. যেসময় আপনি সাধারণত ধুমপান করতেন সেসময় নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখুন। যেমন আপনি যদি সন্ধ্যার খাবারে পর সিগারেট খান তাহলে আপনি খাবারের পর সোজা উঠে বাসন কোসন ধুতে চলে যান। ৫. ধুমপান ছেড়ে দেয়ার কিছুদিন পর্যন্ত আপনার খানিকটা খারাপ লাগবে। এই খারাপ লাগার প্রবনতা কাটিয়ে তোলার মানসিকতা রাখতে হবে। এসময় নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। ৬. ধুমপান করে না এমন বন্ধুদের সাথে বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করুন। ৭. ধুমপান একবার ছেড়ে দেবার পরে আবার ধুমপান করলে নিরাশ হবেন না। চেষ্টা করতে থাকবেন। প্রথমবার কোন সময়ে যেয়ে নিজেকে আর আটকাতে পারেননি সেটা চিহ্নিত করে পুনরায় আবার চেষ্টা চালিয়ে যান। আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
0 Comments